রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বাঙলা কলেজে আবারো ছাত্রলীগ পরিচয়ে কয়েকজনের দ্বারা হামলার স্বীকার হয়েছেন দৈনিক বাংলার দূত পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার সুজন বালা ও ফটো সাংবাদিক মেহেদী হাসান।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সরকারি বাঙলা কলেজ ক্যাম্পাসে হামলার এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি নিয়ে সাংবাদিক মহলে চলছে ব্যাপক তোলপাড়।
ঘটনার বিবরণে সরকারি মিডিয়া ভুক্ত জাতীয় দৈনিক বাংলার দূত পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও সরকারি বাঙলা কলেজ বাংলা বিভাগ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুজন বালা জানান, ক্যাডার–বৈষম্য, পদোন্নতিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানসহ বিভিন্ন দাবিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের টানা তিন দিনের ‘সর্বাত্মক কর্মবিরতি’ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সরকারি বাঙলা কলেজ ক্যাম্পাসে গেলে আমার ওপর হামলা চালানো হয়। কলেজের বাংলা বিভাগের সামনে ২টা ছেলে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো এই তোরা কারা? এখানে তোদের কাজ কি? আমি তাদেরকে বলছিলাম আমি কিছু তথ্য নেওয়ার জন্য ম্যাডামদের সাথে কথা বলতে আসছিলাম। তাৎক্ষণিক সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বললো তোরা কি এখানে ছাত্রলীগের অনুমতি নিয়ে ক্যাম্পাসে আসছোস? তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাস থেকে বের হো। আমি বললাম ভাই বের হচ্ছি। তখন সে আমার ওপর আরো ক্ষেপে গিয়ে গলায় ধাক্কা দিয়ে বলে তোর এতো বড় সাহস, মুখের ওপর কথা বলিস। আমি কে চিনিস? তোর প্রেসের গুষ্টি ঠাপাই। বাঙলা কলেজে কোনো সাংবাদিকের কাজ নাই। এখনই ক্যামেরা নিয়ে এখান থেকে ভাগ। এরপর সাথে ২/১ জনকে বলতেছে লাঠি নিয়ে আসতে। আমি বাঙলা কলেজের স্টুডেন্ট পরিচয় দেওয়ার পরে তারা আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়। আমার সাথে আমার ক্যামেরাম্যানও ছিলো। পরবর্তীতে একজন ম্যাডামসহ আরো কয়েকজন এসে দ্রুত আমাদেরকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং চলে আসতে সহযোগিতা করেন।
কলেজ ক্যাম্পাসে সাংবাদিক নির্যাতনের এ ঘটনায় সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জাহাঙ্গীর হোসেনের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
ক্যাম্পাসে সাংবাদিক নির্যাতনের এ ঘটনায় উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করে বাঙলা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মানবকণ্ঠের সহ-সম্পাদক সজিবুর রহমান সজিব বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে সাংবাদিক হামলার ঘটনায় আমরা বিব্রত ও সঙ্কিত কারণ ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের ওপর হামলার এ ঘটনা নতুন নয়। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রতক্ষ্যদর্শীদের মাধ্যমে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। আশাকরি ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা গেলে হামলাকারীদের সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।
সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় দৈনিক বাংলার দূত পত্রিকার বার্তা সম্পাদক আদ্রিতা ইসলাম জানান, সারাদেশে একের পর এক সাংবাদিক নির্যাতন, হয়রানি, হামলা-মামলার ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমন ঘটনা ঘটিয়ে, ক্ষমতার আনুকূল্যে বিচারের আওতার বাইরে থাকার বিষয়টিও স্বাভাবিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় মিরপুর সম্মিলিত সাংবাদিক জোটের সভাপতি ‘দ্যা এক্সামপল’ পত্রিকার সম্পাদক মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, সাম্প্রতিককালে সাংবাদিকদের ওপর সংঘঠিত বিভিন্ন হামলা, মামলা ও নির্যাতনের প্রতিরোধে প্রশাসনিক ও আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সাফল্যের ঘাটতি, নির্লিপ্ততা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের একাংশের প্রচ্ছন্ন সমর্থন পাওয়ায়, হামলাকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এক্ষেত্রে সাংবাদিক ঐক্যবদ্ধভাবে এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হবে। এ অবস্থায় হামলকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বাঙলা কলেজে ছাত্রলীগ পরিচয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের মুঠোফোনে কল করলেও কল রিসিভ না-হওয়ায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।